বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার ও বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন ব্যয় কমাতে সহায়তা করার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূত ডেরেক লো ঢাকায় তেজগাঁও কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূত লোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে প্রচুর অর্থ পাচার করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের।’ রাষ্ট্রদূত লো সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর লক্ষ্যে ঢাকার সঙ্গে কাজ করার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, প্রবাসীরা যেন তাদের পরিবারের কাছে আরো বেশি অর্থ পাঠাতে পারে সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অভিবাসনের ব্যয় কমিয়ে আনতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে নিয়োগের খরচ কমানোর জন্য একটি মডেল কাঠামো তৈরি করতে পারি।’
রাষ্ট্রদূত সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশকে বৈদেশিক নিয়োগ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করার পরামর্শ দেন যাতে করে মানব পাচার ও শ্রমিক শোষণের আশঙ্কা কমে যায়।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, শিপিং, শিক্ষা এবং নিজ নিজ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার পতনের মাত্র তিন মাসের মাথায় অর্থনীতি ভালোভাবে পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। এখন এ দেশে ব্যবসা করার উপযুক্ত সময়।’
সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর ফ্রান্সিস চং বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব করেছিল। প্রস্তাবিত এফটিএর ওপর একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং উভয় দেশই এখন কীভাবে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করা যায় তার সুযোগ নির্ধারণ করবে।’
লো বলেন, ‘সিঙ্গাপুর পানি শোধন ও বর্জ্য শক্তি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তাদের দক্ষতা ভাগাভাগি করতে পারলে খুশি হবে।’ তিনি উভয় দেশের খাদ্য সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার প্রস্তাব করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র নীতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তার সরকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে ও সার্ককে দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরো ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার প্লাটফর্ম হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।’
তিনি আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য সিঙ্গাপুরের সমর্থন চান। প্রতিক্রিয়ায় ডেরেক লো জানান, তার দেশ এ ব্যাপারে ইতিবাচক রয়েছে।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি-বিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় সিঙ্গাপুরের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মাইকেল লি।
লিবিয়া আরো বাংলাদেশী কর্মী নিতে আগ্রহী: লিবিয়া দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ বাংলাদেশ থেকে আরো জনশক্তি নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে সেখানকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তির আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুতালিব এসএম সালিমান গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান।
রাষ্ট্রদূত সালিমান লিবিয়ার সমাজে বাংলাদেশী কর্মী বাহিনীর অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘তার দেশে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অনেক বেশি।’ তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে লিবিয়ায় কর্মরত কিছু বাংলাদেশী চিকিৎসক বেতনসংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে চলমান সংস্কার সম্পন্ন হলে দ্রুতই বিষয়টি সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশ ও লিবিয়া একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আমরা মানব পাচারকে সমর্থন করি না। এর জন্য অনেক মানুষ ভুগছে। এটি বন্ধ করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’