সামাজিক মাধ্যমে গুজব, হয়রানি ব্ল্যাকমেইলিং বাড়ছে

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ খালি, শ্রীলঙ্কার অবস্থা হচ্ছে দেশের অর্থনীতির—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গুজব, অপতথ্য বাড়ছে। ভিত্তিহীন এসব তথ্যে অনেকে বিভ্রান্তও হচ্ছে।

সরকারের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও করা হচ্ছে নানা অপপ্রচার। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে করা হচ্ছে চরিত্রহনন।

এই গুজব সৃষ্টিকারীদের একটা বড় অংশ দেশের বাইরে অবস্থান করছে। দেশে এদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে।

ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক গুজবও বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

নির্বাচনের আগে আবারও সুবিধা নেওয়ার বা সহিংসতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব মাধ্যম ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সরকারের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিদেশে সক্রিয় সাইবার অপরাধ মামলার আসামিদের বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অপতথ্য ছড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। সামাজিক অবস্থান ও মান-সম্মানের কথা ভেবে ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ এই সাইবার শিকারিদের ফাঁদে পা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নীরবে দিয়ে দিচ্ছেন। এদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলে অর্থ আদায়ের এসব তথ্য প্রকাশও হচ্ছে।

রিউমার স্ক্যানার নামের একটি সংগঠনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর তারা অন্তত এক হাজার ৪০০টি গুজব শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছিল ২০৬টি। রাজনীতিবিষয়ক ৯২টি, জাতীয় ইস্যুতে ১১৫টি, খেলাধুলা নিয়ে ১৫৬টি এবং শিক্ষা বিষয়ে ৩৮টি গুজব ছড়ানো হয়েছে। ছিল কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ১১১টি গুজব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় দেশে ছড়িয়ে পড়া ৬৬টি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্যও শনাক্ত করেছে সংগঠনটি।

তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই ধরনের গুজব আছে। একটি নির্দোষ গুজব, যা কোনো অপরাধের আশঙ্কা সৃষ্টি করে না। অন্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার, যার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ ব্যক্তি, সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার সুযোগ আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি কিছু অনলাইন পোর্টালেও এই তৎপরতা দেখা যায়। আবার কোনো ব্যক্তিবিশেষকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যেও কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বলছে, অন্তত ৬০ জন সাইবার অভিযুক্তের তালিকা করা হয়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষ ২৭ জনকে লাল তালিকাভুক্ত করে তাদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদের মধ্য থেকে তিনজনের অপরাধের বিবরণ আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থাকে (ইন্টারপোল) অবহিত করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে এদের লাগাম টানা যাচ্ছে না।

বাড়ছে উদ্বেগ

অনেক দেশেই সাম্প্রদায়িক হামলা, সহিংসতা, হত্যার মতো অপরাধের ঘটনা ঘটছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া গুজবের কারণে। বিশ্বের অনেক দেশ এই সমস্যা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশেও গত কয়েক বছরে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার উৎস ফেসবুক। কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গুলি ও মৃত্যু, শাপলা চত্বরে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়া ইত্যাদি এখন আলোচিত গুজবের উদাহরণ।

বেসরকারি সংগঠন সুচিন্তার নির্বাহী সদস্য জব্বার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রতিককালে বিদ্যুৎ নিয়ে নানা গুজব দেখতে পাচ্ছি। বলা হচ্ছে, আগামী দিনে টানা বিদ্যুৎ থাকবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’

জব্বার হোসেন আরো বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের অপব্যবহার রোধে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক তথ্য জানিয়ে গুজব সৃষ্টিকারীদের মোকাবেলা করতে হবে।

আলোচিত অভিযুক্তরা যেভাবে কাজ করে

প্রথমে তারা নিজেদের পেজে বিজ্ঞাপন প্রচার করে, অমুককে নিয়ে ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ আসছে। তবে বেশির ভাগ সময় আর প্রতিবেদন প্রচার করা হয় না। ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি না হলে সত্য-মিথ্যা বানিয়ে প্রচার করা হয় মনগড়া প্রতিবেদন।

এদের মধ্যে বিদেশে থাকা টিটো রহমান ও নাজমুস সাকিব নাগরিক টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। তাঁদের চ্যানেলের কনটেন্ট পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে কিছু পরিচিত ব্যক্তি তাঁদের টার্গেট। তাঁরা রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন। সেখানে তাঁদের অবস্থান সরকারবিরোধী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, শিল্প গ্রুপ সম্পর্কে অশালীন, অসত্য তথ্য প্রচার করেন তাঁরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিজেদের বৈঠকের ছবিও প্রচার করছেন তাঁরা। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি জানান দিতে চাচ্ছেন এবং ভীতি প্রদর্শন করতে চাচ্ছেন।

নাগরিক টিভি নামের চ্যানেলটি গত ৭ এপ্রিল এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতের ছবি ব্যবহার করে জানিয়েছে, ‘গভীর অনুসন্ধানে’ নেমেছে তারা। এর আগে ৪ এপ্রিল ‘নাগরিক টিভি এক্সক্লুসিভ : দুবাইয়ে টাকা পাচারের কুখ্যাত তিন বন্ধুর ভয়ংকর সিন্ডিকেট’ শিরোনামে প্রমো প্রচার করা হয়। বলা হয়, শিবলী রুবাইয়াত, ইউনুস গ্রুপের মোহাম্মদ ইউনুস এবং আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমানের ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘লন্ডনে নজরুলের মেয়ে আনিকার সম্পদের পাহাড়’ শিরোনামে এক্সিম ব্যাংকের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। এগুলোর অনেক কিছু তারা আর প্রচার করে না। যেগুলো প্রচার করে সেগুলোরও সারবত্তা বা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না।

সাইবারজগৎ নিয়ে কাজ করেন, এমন একজন কালের কণ্ঠকে বলেন, সাইবার দুনিয়ায় গুজব ছড়িয়ে ব্ল্যাকমেইল করার পাশাপাশি এরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতিপক্ষের কাছ থেকেও সুবিধা পায়। আবার চটকদার ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডলার খরচ করে তা বুস্ট করে ভাইরাল করায়। কারণ ওই চ্যানেলের ভিউ ও সাবস্ক্রাইব বেশি হলে সেখানেও তাদের আয় আছে।

ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া পিনাকী ভট্টাচার্যও নানা তথ্য প্রচার করেন তাঁর চ্যানেলে। তাঁর টার্গেটের অন্যতম হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা। তিনি কাউকে সরকারের সমর্থক মনে করলে তাদের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করেন। তিনি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিধান নিয়ে সমালোচনা করেন। সনাতন ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা একে ‘ধর্মীয় উসকানি’ বলে মনে করেন। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স দেশে না পাঠাতেও তিনি প্রবাসীদের উসকানি দিয়ে থাকেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়েও তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেন।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়্যারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব বাড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সমান্তরাল হারে বাড়ছে গুজবসহ সাইবার অপরাধ। সহিংস উগ্রবাদ, রাজনৈতিক অপপ্রচার, মিথ্যা সংবাদ—এর সবই হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে।

কাজী মুস্তাফিজ বলেন, দেশে গুজব মোকাবেলা ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, অফিস-আদালতে সৎ ও নৈতিক জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে সাইবার বিষয়ে দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবল বাড়াতে হবে।

১,৩২৭ মামলা

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার, ডিবি এবং র‌্যাবের সাইবার ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত সাইবার অপরাধের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে এক হাজার ৩২৭টি। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার ৭৫৯ জন অভিযুক্তকে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মনজুর রহমান বলেন, দেশবিরোধী গুজব কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলো কাজ করছে। প্রচলিত আইন অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিদেশে অবস্থান করা সাইবার দুর্বৃত্তদের বিষয়েও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

১,৪৩১টি লিংক অপসারণে বিটিআরসিকে অনুরোধ

সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত রাষ্ট্রবিরোধী, জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ গুজব কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে উসকানিমূলক ও উগ্রবাদসংশ্লিষ্ট কনটেন্ট অপসারণের জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ জানানো হয়। বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তৃপক্ষকে নিয়ম অনুযায়ী অনুরোধ পাঠায়। তারা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন অনুযায়ী অভিযোগ করা কনটেন্ট যাচাই করে তা অপসারণের ব্যবস্থা নেয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক হাজার ৪৩১টি ক্ষতিকর লিংক অপসারণের জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ফেসবুক, টিকটক, মেসেঞ্জার, ইউটিউব ইত্যাদি নিয়মিতভাবে মনিটর করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশ থেকে পরিচালিত যেসব আইডি থেকে গুজব ছড়ানো হয়, সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যেগুলো বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে পাঠিয়ে দিই। আমাদের সাইবার মনিটরিং ইউনিট সাইবারজগতে গুজব নজরদারি করছে।’

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২২ সালে বিটিআরসিতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রেরিত ক্ষতিকর কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ প্রায় ৪১ শতাংশ বেড়েছিল। ২০২২ থেকে চলতি বছরের মে মাসে কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক কর্তৃপক্ষ তাদের নীতিমালা অনুযায়ী ক্ষতিকর কনটেন্ট অপসারণ করে থাকে।

জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান (জ্যেষ্ঠ সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কিংবা সরকারের কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে যখন আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ করে, তখন আমরা সংশ্লিষ্ট মাধ্যমের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দিই। তারা আগে আমাদের অনুরোধ কম রাখত। এখনো সব অনুরোধ রাখে না। এখন পর্যন্ত আমাদের অনুরোধ রাখার হার ৩৫ শতাংশ।’ সাম্প্রতিককালে বিটিআরসির কাছে অনুরোধ আসার পরিমাণ বেড়েছে বলে জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনের তথ্য প্রচারে নীতিমালা আছে। বিটিআরসিও এমন কোনো নীতিমালা নিয়ে ফেসবুক-গুগলের সঙ্গে কাজ করছে কি না, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সমন্বয় বাড়াতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে অফিস চালু করার জন্য বলেছি। আমরা নীতিমালার চেয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিগুলো নিয়ে আলোচনা বেশি করি। যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন ত্বরিত সহযোগিতা দিতে হয়। শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচনের বাইরেও যদি কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সে ব্যাপারে আমরা ত্বরিত ব্যবস্থা নিই।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে যদি গুজব আরো বাড়ে, তাহলে আমাদের মনিটরিং আরো জোরদার করা হবে। আমরা বিটিআরসির সক্ষমতা বাড়াচ্ছি।’

সচেতনতা বাড়াতে কাজ  করছে ডিএলসি

দেশব্যাপী মানুষকে সচেতন ও ডিজিটালজগৎ নিয়ে সচেতন ও শিক্ষিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) উদ্যোগে কাজ করছে ‘বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প।

ডিএলসির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল আলম খান বলেন, অনলাইনে মিথ্যা সংবাদ বা ভুল তথ্য চিহ্নিত করতে না পারা, সাইবার শিকারিদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হওয়া, সাইবার বুলিং, হয়রানি, অনলাইন আচরণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *