পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি রূপান্তর ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন অপরিহার্য। সরকার বর্তমানে জ্বালানি নীতিমালা পর্যালোচনা করছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক উৎপাদন থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উচ্চ আমদানি শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশে সৌরশক্তি প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণ আমাদের বড় পরিবেশগত সমস্যা, তাই এখনই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের সঠিক সময়।’
আজারবাইজানের বাকুতে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৯) ‘পাথওয়েজ টু ট্রিপলিং রিনিউএবলস ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি চাহিদার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া চা বাগান ও অনাবাদি সরকারি জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানের জলবিদ্যুৎ শক্তি আমদানির পাশাপাশি একটি আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সৌর ও বায়ুশক্তি সহজেই সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।’
এর আগে কপ-২৯ সম্মেলনের ‘বাইলিটারাল উইথ এলডিসি মিনিস্টারস অন মিটিগেশন’ শীর্ষক অধিবেশনে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘গ্লোবাল উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে এ দশকের মধ্যেই কার্বন নিঃসরণ ব্যবধান বন্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ৪৩ শতাংশ ও ২০৩৫ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ হ্রাস করতে হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘মিটিগেশন ওয়ার্ক প্রোগ্রামকে এলডিসিগুলোর শর্তযুক্ত এনডিসি লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সম্পদ ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বৈশ্বিক সংলাপগুলো জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ও প্রয়োজনীয় অর্থ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। কার্বন নিঃসরণ বেড়ে চললে পরিস্থিতি এমন হবে, যেখানে কোনো অভিযোজন কার্যকর হবে না এবং এর খরচ আমাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে।’
উপদেষ্টা কপ২৯-এ ‘উচ্চ পর্যায়ের অভিযোজন অর্থায়ন সংলাপ’-এ বাংলাদেশের পক্ষে অভিযোজন তহবিল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অভিযোজন তহবিল বরাদ্দের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের সুরক্ষা ও টেকসই সক্ষমতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।’
রিজওয়ানা হাসান জাতীয় সংস্থাগুলোর জন্য তহবিলপ্রাপ্তি সহজ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ও বাজারভিত্তিক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণভার বাড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (এনএপি) প্রতি বছর অভিযোজনের জন্য প্রয়োজন ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। অথচ গত দুই দশকে অভিযোজন তহবিল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তহবিল (এলডিসিএফ) মিলে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, যা ১৬০টি দেশের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রতুল। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করার প্রস্তাব স্বচ্ছতার অভাবে ভুগছে এবং বাস্তব চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ।’