সংস্কার উদ্যোগে নিশ্চিত করতে হবে মানবাধিকার

দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসেই সিরিজ বৈঠক করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকে সংস্কার উদ্যোগে মানবাধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন ভলকার তুর্ক। এ ছাড়া জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির কাজ জাতিসংঘ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান তিনি।

সিরিজ বৈঠকের শুরুতেই গতকাল সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভলকার তুর্ক। সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। এ দুটি বিষয় একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সে ক্ষেত্রে মানবাধিকার যেন নিশ্চিত করা হয় সেটিই বলেছি।তিনি আরও বলেন, জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কাজ করছে। আমরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। আমাদের হেড অফিস পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। বৈঠকের বিষয়ে ড. আফিস নজরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জাতিসংঘ তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছে। তবে ভলকার তুর্ক দুটি প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। প্রথমটি বিচার বিভাগ স্বাধীন করা এবং দ্বিতীয়টি হলো মৃত্যুদ রহিত করা। আমরা বলেছি, বিচার বিভাগ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় মৃত্যুদ রহিতের সুযোগ নেই। পেনাল কোডে (দ বিধি) মৃত্যুদে র কথা বলা আছে। হুট করে এটা পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভলকার তুর্ক। সাক্ষাৎ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ভলকার তুর্কের সঙ্গে মূলত মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মানবাধিকার ইস্যুতে তাঁরা আমাদের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছেন। পাশাপাশি পরিবর্তিত পরিস্থিতি উত্তরণ ও বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ভলকার তুর্ক। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা জাতিসংঘের সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছি।

পরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন ভলকার তুর্ক। উপদেষ্টারা হলেন শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম; সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

মধ্যাহ্নভোজ শেষে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার বিষয়ে ভলকার তুর্কের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে সরকার। জুলাই গণহত্যা নিয়ে তদন্ত করছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। ঢাকায় অফিস খুললে তদন্তে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও জানান উপদেষ্টা। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমন্বয়কারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ভলকার তুর্ক। পাশাপাশি অভ্যুত্থানের সময় তরুণদের আঁকা দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি পরিদর্শন করেন তিনি। সভায় ভলকার তুর্ক বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিক, শ্রমজীবী, সমাজকর্মীসহ সবার নির্বিঘ্নে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য একটি উন্মুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। বাংলাদেশের তরুণদের সংগ্রামের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এ তরুণদের যাত্রাপথের সঙ্গী হতে এবং সমর্থন করতে আমরা প্রস্তুত। তথ্য অনুসন্ধান বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং উত্তরণের প্রক্রিয়াগুলোয় আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে চাই। এর আগে গতকাল সকালে দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সেনাবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *