অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বিগত শাসনামল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আর্থিক, পুঁজিবাজার, ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতের সংকট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’ শ্বেতপত্র কমিটি, অর্থনীতি পুনঃকৌশলীকরণ কমিটি এবং অন্যান্য কমিটি গঠন ও কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব জায়গায় সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’ সম্প্রতি বাসসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পুঁজিবাজার সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাজারের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ ও সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে হেরফের রোধে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধন লাভের ওপর করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করের হার কমানোর আগে পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় লাভ হলে করদাতাদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধন লাভের ওপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হতো। পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে আইসিবিকে এরই মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন সংশোধনমূলক ব্যবস্থা চলছে। এগুলো সবই একটি বার্তা দেয়ার জন্য।’
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এডিপির অধীনে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও পর্যালোচনা করছি। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এবং উচ্চতর রিটার্নের হার রয়েছে এমন প্রকল্পগুলো এখন একনেকে রাখা হচ্ছে। চলমান প্রকল্পগুলোও অব্যাহত থাকবে।’
সরকার ঋণ পরিশোধে চিন্তিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যবহারে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে এবং নিজের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটে আরো চাপ আসতে পারে, তবে বাজেট সংশোধনের সময় বিশেষ করে উন্নয়নের দিকে লক্ষ রেখে তা পর্যালোচনা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এডিপিকে যতদূর সম্ভব ন্যায়সংগত করা হবে। এটিকে বড় করা হবে না, আবার এটি খুব ছোট করা হবে না।’ এডিপিকে খুব যৌক্তিক করা সক্রিয় বিবেচনার মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি, বাজারে কাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকায় এক-দুই মাসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রমজানে ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, খেজুর ও সয়াবিন তেল নিশ্চিত করছি। বিশ্ববাজারের কারণে চিনি, চাল ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন,”‘আমাদের মূল্যস্ফীতির একটি বড় কারণ আমদানীকৃত মূল্যস্ফীতি। তা সত্ত্বেও আমরা আমদানীকৃত জিনিসের ওপর শুল্ক কমিয়েছি। টিসিবি প্রয়োজনে ট্রাক সেলের মাধ্যমে পরিধি বাড়াবে এবং আগামী ডিসেম্বর এবং এর পরও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকতে পারে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘রমজানে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ডিম উৎপাদনে প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করছি যে পবিত্র রমজান মাসে কোনো ঘাটতি হবে না। বেসরকারি আমদানিকারকরা চাল আমদানি না করলে খাদ্য অধিদপ্তর নিজস্ব ব্যবস্থায় টিসিবি কর্তৃক সয়াবিন তেলসহ সরবরাহ নিশ্চিত করবে।’