পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের শিল্প এলাকা থেকে বাড়ির পথ ধরেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে পথে পথে কোরবানির পশুর হাট, পশুবাহী ও ফলের গাড়ি থাকায় ভোগান্তির শঙ্কা আছে। সড়কে গাড়ির সবচেয়ে বেশি চাপ কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায়।
মহাসড়কে চলাচলকারী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শিল্পকারখানা আছে। এসব কারখানা আজ বিকেল থেকে পর্যায়ক্রমে ছুটি হচ্ছে। কারখানায় কাজ করা লাখ লাখ শ্রমিক ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হওয়ায় মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করেছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, যানজট ও ভোগান্তির অন্যতম কারণ হতে পারে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী পশুর হাট। গাজীপুর মহানগরীর মধ্যে এ বছর অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে ১৭টি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মালেকের বাড়ি, বোর্ড বাজার, গাজীপুরা ও টঙ্গী সড়কের পাশে কয়েকটি পশুর হাট আছে। এসব হাটে পশুবাহী ট্রাক, পিকআপ প্রবেশ করা এবং বের হওয়ার সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ ছাড়া হাটের সামনে পশুবাহী গাড়ির পার্কিং ও হাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানের কারণে যানজট বৃদ্ধির শঙ্কা আছে।
এদিকে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের বেশি সড়কে চলছে এলিভেটেড ফ্লাইওভারসহ (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) বিআরটির উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। প্রায় ১১ বছর ধরে চলা এই প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। সড়কের মাঝখানের খোঁড়াখুঁড়িতে দুই পাশেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে চলাচলের লেন। এ কারণে সড়কে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেলে এসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার অশোক কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে ঈদযাত্রায় যেন ভোগান্তি না হয়, এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে চালকেরা সচেতন থাকলে যানজট অনেকটা কমে যায়। মহাসড়কের পাশে যেসব পশুর হাট বসেছে, তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি তারা নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়ক পশুর গাড়ি রাখে বা টানাটানি করে, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি আছে বলে জানান তিনি।
চন্দ্রায় গাড়ি চলছে থেমে থেমে
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা আজ সকাল থেকে অনেকটা ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। বিকেল পাঁচটার দিকে সাভারের বাইপাইল থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত পুরোটাতেই থেমে থেমে যানবাহন চলছিল।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় রাজশাহীগামী শ্যামলী পরিবহনের চালক সফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় বিকেল পাঁচটার দিকে। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে সাভার পর্যন্ত যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি। কিন্তু নবীনগরের পর থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত থেমে থেমে আসতে হয়েছে। চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকাতেও যানবাহনের চাপের কারণে আধা ঘণ্টা ধরে একটু একটু করে যেতে হচ্ছে।
আল নূর এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের চালকের সহকারী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মনে করেছিলাম আজকে সড়ক ফাঁকা থাকবে। কিন্তু দুপুরের পর থেকে সড়কে ব্যাপক চাপ পড়েছে। পুরো সড়কেই থেমে থেমে চলতে হচ্ছে।’
এদিকে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ায় যানবাহনগুলো অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। বগুড়া দুপচাঁচিয়া এলাকার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কারখানা আজ দুপুরে ছুটি হয়েছে। ৯ দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। মনে করেছিলাম আজ যানজট হবে না, কিন্তু তার বিপরীত হয়েছে। সড়কে শুধু গাড়ি গাড়ি। তারপরও গাড়িতে উঠতে পারছি না। যারা ওঠাচ্ছে, তারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে।’
নওগাঁর পত্নীতলা এলাকার মিজার হোসেন বলেন, ‘এক হাজার টাকার কমে কোনো গাড়িতেই নিচ্ছে না। বেলা দেড়টা থেকে চন্দ্রায় দাঁড়িয়ে আছি। বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘরমুখী মানুষ চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় এসে জড়ো হয়েছেন। এ কারণে এখানে যানবাহন এবং মানুষের চাপ সব সময় লেগেই আছে।’