সরকার পরিচালনায় কোনো ধরনের অদক্ষতা দেখতে পেলে জনগণ তা সহজভাবে মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে (আইইবি) গতকাল জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) তৃতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তিন মাস পরে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক বা অন্যায্য নয়। সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা দেখতে পেলে জনগণ তা সহজভাবে মেনে নেবে না। আমি আগেও বলেছি, সংস্কারকাজ করতে গিয়ে অগ্রাধিকার বাছাইয়ে যদি ভুল হয় তাহলে তা জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবেই বিবেচিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুদিন আগে আহতরা হাসপাতাল থেকে যেভাবে বের হয়ে এসেছেন, সেটা আমাদের বিবেকবান প্রত্যেকটা মানুষের জন্যই লজ্জাকর বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কেন অগ্রাধিকার লিস্টে নেই, থাকলেও কত নম্বরে ছিল?’
তারেক রহমান বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে স্বৈরাচারের দোসররা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না। স্বৈরাচার পালানোর পর একটি বিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মাফিয়া সরকারের তৈরি করা জঞ্জাল তিন মাসে দূর করা সম্ভব না।’
স্বৈরাচারী সরকার গত ১৫ বছর দেশকে আমদানিনির্ভর, পরনির্ভর ও ঋণনির্ভর করেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এমন অবস্থা থেকে দেশকে বের করে এনে যেকোনো উপায়ে সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতকে আরো লাভজনক করতে ও বিশ্ববাজারে এর চাহিদা তৈরিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিশেষ করে এসএমই খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়িয়ে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর বিষয়টিও বিএনপির বিবেচনাধীন রয়েছে। একটি দেশের রাজনীতি যদি রুগ্ণ হয় অর্থনীতিও রুগ্ণ হতে বাধ্য। স্বৈরাচারী আমলে আমরা সেটা দেখেছি। তারা উন্নয়নের নামে যে মেগা প্রজেক্ট করেছিল, তার আসল রূপ কিন্তু এখন বের হয়ে আসছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উন্নয়নে ঐতিহাসিক সনদ বলে আমরা মনে করি। ঘোষিত এ ৩১ দফা বাস্তবায়নে মানসম্পন্ন ও প্রায়োগিক শিক্ষার ওপরেও কিন্তু জোর দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি জনসংখ্যা কোনো অভিশাপ নয়; বরং এ জনসংখ্যাকে যদি মানবসম্পদে রূপান্তর করা যায় তাহলে দেশের উন্নয়নে সেটাই বড় শক্তি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ আশা করছে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ পরিবেশে তারা ভোট দিতে সক্ষম হবে। জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে। জনগণ যখন সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবে তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কাজ করছে তখন জনগণের সঙ্গে সম্পর্কটা দৃঢ় হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার লক্ষ্য। জনগণের জীবনযাত্রাকে একটু ভালো করা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো করা, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা, মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা ভালো করা, নিরাপত্তা একটু ভালো করা এগুলোই আমাদের লক্ষ্য। অতীতে যখনই বিএনপি জনগণের ভোটে সুযোগ পেয়েছে তখন চেষ্টা করেছে যতটুকু সম্ভব এ কাজগুলো করার।’